‘কঠোর লকডাউন’ শুরুর আগে মানুষ যেভাবে গ্রামের পথ ধরেছিল, তাতে সংক্রমণ সারাদেশে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।‘কঠোর লকডাউন’ শুরুর আগে মানুষ যেভাবে গ্রামের পথ ধরেছিল, তাতে সংক্রমণ সারাদেশে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে রোগীর সংখ্যা যত দ্রুত বাড়ছে, তা আগে দেখা যায়নি।
শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বুধবার ৭ লাখ ছাড়ায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, এই লাখ রোগী বাড়তে মাত্র ১৬ দিন সময় লেগেছে। এর আগে ১ লাখ রোগী বাড়তে সবচেয়ে কম সময় লেগেছিল ৩০ দিন, সেটা গত বছরের জুলাইয়ে।
চীন থেকে ছড়িয়ে মহামারী বাঁধিয়ে দেওয়ার পর গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়।
তিন মাস পর ১৮ জুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ছাড়ায়। এর ঠিক এক মাস পর ১৮ জুলাই রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছিল ২ লাখে। এর পরের এক লাখ রোগী শনাক্ত হয় এক মাস নয় দিনে, ২৬ অগাস্ট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়ায় তিন লাখ। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৪ লাখ ছাড়াতে লেগেছিল আরও দুই মাস। তা পাঁচ লাখে পৌঁছাতে সময় লাগে ৫৫ দিন। এরপর সংক্রমণের গতি কিছুটা কমতে থাকায় পরের এক লাখ রোগী শনাক্ত হয় ১০২ দিন পর। গত ২৯ মার্চ শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়িয়েছিল। এরপর সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে দ্রুত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ২৯ মার্চের পর দৈনিক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক বারের জন্যও ৫ হাজারের নিচে নামেনি। এর মধ্যে ৭ এপ্রিল ৭ হাজার ৬২৬ জন রোগী শনাক্তের খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যা এই পর্যন্ত এক দিনে সর্বাধিক শনাক্ত।
রোগীর সংখ্যার হিসাবে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৩৩তম। বাংলাদেশের মতো ভারতেও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত। দেশটি ব্রাজিলকে হটিয়ে এখন সংক্রমণের দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
ভারতে এক কোটি ৩৮ লাখ রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রথম স্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩ কোটি ১৩ লাখ। তৃতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে রোগী ১ কোটি ৩৫ লাখ। এদের চেয়ে অনেক কম ৫১ লাখ লাখ রোগী নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। রাশিয়া ও যুক্তরাজ্য রয়েছে পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে।
পাকিস্তানে রোগীর সংখ্যা বাংলাদেশের চেয়ে একটু বেশি। দেশটিতে শনাক্ত হয়েছে ৭ লাখ ৩৪ হাজার কোভিড-১৯ রোগী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে এখন দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে এই অঞ্চলে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটেছে ৬৩ শতাংশ। এশিয়ার পর ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির গতি বেশি দেখা গেলেও তা তুলনায় অনেক কম। সেখানে এক সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ২২ শতাংশ। আমেরিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এক সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যথাক্রমে ৫ ও ৬ শতাংশ।
বিপরীত চিত্র দেখা গেছে ইউরোপ ও আফ্রিকার ক্ষেত্রে। ইউরোপে এক সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি ৪ শতাংশ কমেছে, আফ্রিকায় কমেছে ১৪ শতাংশ।
বাংলাদেশে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে মৃত্যুও বেড়েছে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর প্রতিদিনই ৫০ জনের বেশি মৃত্যুর খবর আসছে। বুধবারই ৯৬ জনের মৃত্যুর রেকর্ড হয়।
দেশে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষাসহ নানা কারণ চিহ্নিত করছেন গবেষকরা।
সংক্রমণ ঠেকাতে বুধবার থেকে কঠোর লকডাউন আরোপ করেছে সরকার। তবে তার আগে সংক্রমণের কেন্দ্র রাজধানী থেকে মানুষ যেভাবে বিভিন্ন জেলায় ছুটছিলেন, তাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।